বিজ্ঞানক্ষেত্রে চলছে চূড়ান্ত অরাজকতা। সাফল্যের জন্য কাকে বিজ্ঞান পুরস্কার দেওয়া হবে, তাও মোদি সরকার ঠিক করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। এই অরাজকতার বিরুদ্ধে সরব হয়ে এবার কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিলেন প্রায় ২০০ জন স্বনামধন্য বিজ্ঞানী। এঁদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অধ্যাপক অজয় সুদ, কলকাতার আইআইএসইআরের প্রাক্তন বিজ্ঞানী সৌমিত্র ব্যানার্জি এবং আইইউসিএএ-র প্রাক্তন ডিরেক্টর নরেশ দাদিচ। বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বিজ্ঞান পুরস্কার কাকে দেওয়া হবে তার শেষ কথা বলার অধিকার কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রীকে দিলে গবেষণার কজে তলানিতে এসে ঠেকবে। এই অবস্থার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানালেন বিজ্ঞানীরা।
উল্লেখ্য এই
নিয়ে বিজ্ঞান পুরস্কার ইস্যুতে দ্বিতীয় বার চিঠি দিলেন বিজ্ঞানীরা। এর আগে গত মাসে
শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার বিজয়ী ২৬ জন বিজ্ঞানী পুরস্কার দেওয়ার পদ্ধতিগত খুঁটিনাটি
নিয়ে সরব হয়েছিলেন। শান্তিস্বরূপ ভাটনগর সহ একগুচ্ছ বিজ্ঞান পুরস্কারের বিলুপ্তি ঘোষণা
করেছে মোদি সরকার। এর জায়গায় রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞান পুরস্কার ঘোষণা (আরভিপি) করা হয়েছে।
গতমাসে চারটি শাখায় মোট ৩৩ জনকে আরভিপি-তে সম্মানিত করা হয়েছে। এই পুরস্কারের কথা ঘোষণা
করে কেন্দ্র জানিয়েছিল, রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞান পুরস্কার কমিটি আরভিপি প্রাপকদের তালিকা
তৈরি করবে। এই কমিটির পৌরোহিত্য করবেন মুখ্য বিজ্ঞান উপদেষ্টা।
তবে এই নির্দেশিকা
যে মানা হয়নি, তা প্রকাশ্যে এনেছে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম। তাদের রিপোর্টে দাবি
করা হয়েছে, কমিটির সুপারিশ করা নামের তালিকা থেকে অন্তত তিনজন বিজ্ঞানীর নাম বাদ দেওয়া
হয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন টাটা ইনস্টিটউিট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের পদার্থবিদ শুভরথ
রাজু, বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেসের পদার্থবিদ প্রতীক শর্মা এবং
আইআইটি খড়্গপুরের অধ্যাপক সুমন চক্রবর্তী। সুমনবাবু ২০২২ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড
কম্পিউটার সায়েন্সে ইনফোসিস পুরস্কার জিতেছেন।
কেন এঁদের বিজ্ঞান
পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করা হল? কারণ এঁদের মধ্যে অন্তত দু’জন পদার্থবিদ রাজু এবং পদার্থবিদ
প্রতীক শর্মা বিভিন্ন সময়ে মোদি সরকারের নানা নীতির সমালোচনা করেছেন। গত বছর সমাজকর্মী
নাতাশা নারওয়াল এবং দেবাঞ্জনা কলিতা ইউএপিএ নিয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করেছিলেন ইন্ডিয়ান
ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে। শেষ মুহূর্তে সেই আলোচনা সভা বাতিল করে দেয় আইআইএসসি। এরপরেই
আইআইএসসির সমালোচনা করেন রাজু এবং শর্মা। এছাড়াও তাঁরা সংশোধিতি নাগরকিত্ব আইন (সিএএ)
এবং ভীমা কোরেগাঁওতে এনআইএ-র ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছিলেন।
২৪ সেপ্টেম্বর
শেষতম চিঠিতে ১৭৬ জন বিজ্ঞানী লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞান পুরস্কার প্রাপকদের মানদণ্ড
এবং প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং অবাধ হওয়া প্রয়োজন।’ কেন বিশেষজ্ঞ কমিটির করা তালিকা
থেকে কয়েকজন বিজ্ঞানীকে পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন তাঁরা।
0 মন্তব্যসমূহ