দিনের পর দিন বৃদ্ধা শাশুড়িকে (mother in law) দেখভাল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন বউমা। অবশেষে বৃদ্ধাকে ফ্রাইং পান (frying pan) দিয়ে পিটিয়ে (beats) খুনই (death) করে ফেললেন তিনি। দক্ষিণ দিল্লির নেব সরাই এলাকার বৃদ্ধা খুনের কিনারা করে এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ।
সেই ২০১৪ সাল থেকে নেব সরাইয়ের স্বস্তিক রেসিডেন্সিতে স্ত্রী শর্মিষ্ঠা এবং মেয়েকে নিয়ে থাকেন সুরজিৎ সোম। কলকাতার বাড়িতে থাকতেন সুরজিতের মা হাসি সোম। তিনি আর্থারাইটিসের রোগী। ২০২২ সালের মার্চে মাকে দিল্লিতে নিয়ে যান সুরজিৎ। তাঁর ফ্ল্যাটের পাশেই মায়ের জন্য একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন।
গত ২৮ এপ্রিল দিল্লি পুলিশ একটি ফোন পায়। এক ব্যক্তি জানান, তাঁর বন্ধুর মা হাসি সোম ফ্ল্যাটে পড়ে গিয়েছেন। তিনি রক্তাক্ত। এরপর পুলিশ সেই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখে, রান্না ঘরে হাসি সোম পড়ে রয়েছেন। তাঁর মাথায়, মুখে বেশ কয়েকটি ক্ষত চিহ্ন। পুলিশ জানতে পারে, সুরজিৎ (৫১) ও হাসি (৮৬) দীর্ঘদিন ধরে আর্থারাইটিসে ভুগছেন। হেঁটে-চলতে তাঁদের অসুবিধা হয়।
তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চায় পুলিশ। জানানো হয়, সিসি ক্যামেরায় কোনও স্টোরেজ নেই। তাই কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তা জানতে ক্যামেরাটিকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। সুরজিৎ জানান, তিনি ফোনের মাধ্যমেই ক্যামেরায় নজর রাখেন। তবে ওই দিন ফ্ল্যাটে বিদ্যুৎ না থাকায়, ক্যামেরা কাজ করেনি। তাই মায়ের উপর নজর রাখতে পারেননি। প্রাথমিকভাবে পরিবারের লোকজন বা প্রতিবেশীরা কেউই ঘটনায় সন্দেহ প্রকাশ করেনি। তবে ২৯ এপ্রিল এইমসে হাসির দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। ডাক্তাররা জানিয়ে দেন, সাধারণভাবে পড়ে গিয়ে এতটা ক্ষত হতে পারে না। তাই পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রয়োজন। তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
সুরজিতের মেয়ে পুলিশকে জানায়, মা ও ঠাকুমার মধ্যে বনিবনা হতো না। সুরজিৎও একই কথা বলেন। ঘটনার দিন শর্মিষ্ঠা এবং হাসিই কেবল ফ্ল্যাটে ছিলেন। ডিসিপি (সাউথ) চন্দন চৌধুরী জানান, জেরায় অবশ্য সুরজিৎ স্বীকার করেন, পুলিশ আসার আগে সিসিটিভি ক্যামেরার মেমোরি কার্ডটি তিনি খুলে নেন। সেই মেমোরি কার্ড হাতে পেয়ে রহস্যের পর্দা ফাঁস হয়ে যায়।
দেখা যায়, ২৮ এপ্রিল সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ফ্রাইং প্যান নিয়ে হাসির ফ্ল্যাটে ঢোকেন শর্মিষ্ঠা। রান্নাঘরে গিয়ে তিনি হাসির পিছনে চলে যান যাতে সিসি ক্যামেরায় তাঁকে না দেখা যায়। এরপর হাসিকে বেশ কয়েকবার ফ্রাইং প্যান দিয়ে আঘাত করেন। পুলিশ জানিয়েছে, হাসিকে বেশ জোরে জোরে কাঁদতে শোনা যাচ্ছে। এরপরেই শর্মিষ্ঠাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে পুলিশ প্রাথমিকভাবে মনে করছে, দৈনন্দিন কাজে শাশুড়িকে সহায়তা করা নিয়ে সম্ভবত হতাশ হয়ে পড়েছিলেন শর্মিষ্ঠা। তা থেকে মুক্তি পেতেই সে এই কাণ্ড করে বসে।
0 মন্তব্যসমূহ