বুধবারই কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বাজেটের অন্যতম উল্লেযোগ্য বিষয় হল সিগারেটের উপর (cigarette price) আরও ১৬ শতাংশ কর চাপিয়েছেন তিনি। যে কোনও জিনিসের উপর কর চাপালে তার দাম বাড়ে। বস্তুত এই কর বৃদ্ধির বিরোধিতা শুরু হয়। ব্যতিক্রম সিগারেট। প্রতি বছর নিয়ম করে সিগারেটের উপর কর চাপানো হয়। ফলত দাম বাড়ে। কিন্তু সিগারেটের উপর কর বাড়ানোর বিরোধিতা তেমন শোনা যায় না। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, সিগারেটের দাম বাড়ে (cigarette price) কেন?
এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে—
- ১৯৭০ সালে বাজেট পেশের আগে পদত্যাগ করে বসেন ইন্দিরা গান্ধী সরকারের অর্থমন্ত্রী মোরারজি দেশাই। তখন ইন্দিরাই অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন। সেবার সংসদে বাজেট পেশ করেছিলেন ইন্দিরাই। বাজেট পেশ করার আগে হাত জোর করে ক্ষমা চান ইন্দিরা। তাঁকে সেভাবে দেখে হতবাক হয়ে যান সকলে। পরে ক্ষমার কারণ খোলসা করেন ইন্দিরাই। তিনি বলেন, সিগারেটের উপর ধার্য কর ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২২ শতাংশ করছেন। সেই শুরু।
- বুধবার বাজেট পেশ করে নির্মলা বলেন, সিগারেটের উপর চালু থাকা জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর (এনসিসিডি) আরও ১৬ শতাংশ বাড়ান হল। তিন বছর পর এই করে বদল আনা হল। তাই দামি সিগারেট আরও দামি (cigarette price) হবে।
- আসলে সিগারেট এমন একটি পণ্য, যা খেতে কাউকে উৎসাহিত করা যায় না। অর্থনীতির পরিভাষায় একে বলা হয় ডিমেরিট প্রডাক্ট। এই ধরণের পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে ঘুরপথে তা বিক্রির প্রবণতা বাড়ে। তাই সরকার চায় এই ধরণের পণ্যের বিক্রি কমুক। তাই ঘুরপথে কর বাড়ানো হয়।
- সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে যে তামাক পণ্যের কারণে নানাবিধ রোগের চিকিৎসায় জিডিপির ১.০৪ শতাংশ খরচ হচ্ছে সরকারের। এখন সিগারেট সহ তামাক পণ্যের বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সরকারের এই বাবদ স্বাস্থ্য খাতে খরচ কমবে।
- অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিগারেটের উপর কর বাড়িয়ে অর্থ রোজগার একটি সহজ পথ। কারণ, কর বাড়ালেও সরকারের আয়ের উপর কোনও বিরূপ প্রভাব পড়বে না। সিগারেট খাওয়া কমলেও বাড়তি কর সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেবে।
তাছাড়া সিগারেটের কর বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা।
- তামাক জাত পণ্যের বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণাপত্রে সই করেছে ভারত সহ বিশ্বের ১৮২ দেশ। তাতে সিগারেট সহ সব তামাক পণ্যের উপর ৭৫ শতাংশ কর চাপানোর কথা বলা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ভারতে হু’র বেধে দেওয়া মাত্রার চেয়ে সিগারেটের কর অনেকটাই কম। সিগারেটের কর এখন ৫২.৭ শতাংশ। আর বিড়ির ক্ষেত্রে ২২ শতাংশ এবং পান মশলা, গুটখার মতো চিবানো তামাক পণ্যের ক্ষেত্রে ৬৩.৮ শতাংশ।
আরও তথ্য হল— গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভে-ইন্ডিয়া (গ্যাটস ২০১৬-১৭) অনুযায়ী ভারতে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে ২৭ কোটি ধূমপায়ী রয়েছে। ভারত এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তামাক পণ্যের ক্রেতা। তৃতীয় বৃহত্তম তামাক পণ্যের উৎপাদক।
0 মন্তব্যসমূহ