RammohanRoy Home: চলুন রাজা রামমোহন রায়ের বাড়ি| দেখুন সতীদাহ সঙ্কল্প বেদী

‌Bengali News Click

ভ্রমণের এই পর্বে চলুন ঘুরে আসিল রাজা রামমোহন রায়ের (raja rammohan roy) বাড়ি (ancestral home)। ঘুরে আসি বললাম বটে। আসলে বলা উচিত ছিল ইতিহাসের পথ পরিক্রমা করে আসি। কোন ইতিহাস? আধুনিক ভারতের ইতিহাসের এক যুগপুরুষের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যাঁকে ‘ভারত পথিক’ বলে সশ্রদ্ধ ভক্তি নিবেদন করেছিলেন। আক্ষরিক অর্থেই রামমোহন ছিলেন ভারতের প্রথম আধুনিক মানব। বেদ, পুরাণ, সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, ফার্সিতে সুপণ্ডিত রামমোহন চেয়েছিলেন দেশে এক আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা। কোনওদিন গোঁড়ামি তাঁকে স্পর্শ করেনি। ১৮১৩ সালে ব্রিটিশ সংসদে চার্টার আইন পাশ হয়, তার অন্যতম শর্ত ছিল ভারতের শিক্ষার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১ লক্ষ টাকা ব্যয় করবে। রামমোহন চেয়েছিলেন সেই টাকা খরচ হোক ভারতে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষাদানে। নানা কারণে তাঁর সেই প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। তবে দমে যাননি রামমোহন। 

আরও একটি বিষয় এখানে বলা যেতে পারে, ব্রিটিশ শাসনের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন রামমোহন। একবার তিনি বলেছিলেন, ‘ভারতে ইংরেজ শাসন ভালোর জন্যই।’ সেই রামমোহনই যখন দেখলেন ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনের জেরে শিক্ষিত যুব সমাজ ভেসে যাচ্ছে, তখন তিনি আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন। সেই আত্মীয়সভাই পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠে ব্রাহ্মসভা। তিনিই আবার সতীদাহ প্রথা বন্ধে জনমত গড়ে তোলেন। মূলত তাঁর উদ্যোগেই আইন করে সতীদাহ ভারতে রদ হয়। 

Bengali News Click

সেই ইতিহাস প্রত্যক্ষ করা যাব হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে গেলে। সমাজের চাপে তাঁকে বাড়ি ছাড়তে হয়। ১৮১৭ সালে রঘুনাথপুরে এই বাড়িটি তৈরি করেন রামমোহন। ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন এই বাড়িটিকে ঐতিহ্যবাহী ভবন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন রামমোহনের বাড়িটিকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র করেছে হুগলি জেলা পরিষদ। শীতের সময় পিকনিক করা যায় রামমোহনের বাড়ির ভিতরে। 

কী দেখবেন ? (What to see?)

Bengali News Click


এখানে রয়েছে রামমোহনের শ্বেতপাথরের মূর্তি। এখনও বাড়ির ধ্বংসাবশেষ অনেকটাই অক্ষত রয়েছে। ছাদ না থাকলেও ইটের দেওয়াল অক্ষত রয়েছে। শুধু তাই নয়। সতীদাহ প্রথা রদ নিয়ে রামমোহনের যে উদ্যোগ, তা শুরু হয়েছিল এই বাড়িতে বসেই। বাড়ির উঠোনে তিনি সতীদাহ উচ্ছেদ করবেন বলে ১৮১১ সালে সঙ্কল্প করেছিলেন। রয়েছে সেই সঙ্কল্প বেদী। এছাড়া বাড়ির চারিদিকে রয়েছে পরিখা। আশপাশের সবুজে সবুজ সকলের মন টানবেই। রয়েছে জল ও শৌচালয়ের সুবন্দোবস্ত।

Bengali News Click


কীভাবে যাবেন? (How to reach Rammohan Roy’s home?)

Bengali News Click


সরাসরি রেল পথের ব্যবস্থা নেই। সেক্ষেত্রে তারকেশ্বর পর্যন্ত গিয়ে এরপর বাস বা গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারেন। চাঁপাডাঙায় গিয়ে একটু জিরিয়ে নিন। বহু ডাব বিক্রেতা রয়েছেন। ডাবরে জল খেয়ে একটু চাঙ্গা হন। এরপর প্রস্তুত হোন ইতিহাসের সাক্ষী থাকতে। এরপর মুণ্ডেশ্বরী নদীর সেতু পার হয়ে সামন্ত রোড ধরে চলে যান গন্তব্যে। আর হ্যাঁ, যাওয়ার পথে ঢালাই রাস্তার ধারে প্রাচীন বটবৃক্ষটিকে দেখতে ভুলবেন না। স্থানীয়দের মুখে শুনলাম, শেষবার বাড়ি ছাড়ার পথে এই বটবৃক্ষের দিকে একমনে তাকিয়ে ছিলেন রামমোহন। ইতিহাস সচেতনার সাক্ষী রেখেছিলেন কি না, কে জানে! 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ