সে একটা সময় ছিল যখন কালীপুজোর আলোয় বিছিয়ে থাকত সবুজ রঙের পোকায়। ঠাকুর দেখতে গিয়ে দর্শনার্থীর বিরক্তির কারণ হত সেই পোকা। সাধারণের কাছে শ্যামাপোকা (leafhopper) নামেই পরিচিত ছিল। সাধারণ মানুষ যতই বিরক্ত হোন, অনেকেই এই পোকাকে শুভ বলে মনে করতেন। দুর্গাপুজোর পরে এই শ্যামাপোকার আগমনকে হেমন্তের সূচনা হিসেবেই দেখতেন অনেকে। সেই শ্যামাপোকাই (shyama poka) যেন আজ উধাও পশ্চিমবঙ্গ (west bengal) থেকে।
শ্যামাপোকা আসলে দু’রমক প্রজাতির— নেফোটেটিক্স ভাইরেসেন্স এবং নেফোটেটিক্স নিগ্রোপিক্সাস। ১০ মিমি পর্যন্ত লম্বা এই পোকাটিই কিন্তুর কৃষকের চিন্তার কারণ। আলোর আশেপাশে সবুজ রঙের এই পোকাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আগাম বার্তা দিত। আর পরদিন সকালে সেই আলোর আশেপাশে মড়ে পড়ে থাকত হাজার হাজার শ্যামাপোকা।
কৃষিবিজ্ঞানীরা অবশ্য শ্যমাপোকার অন্তর্ধ্যানে অশনি সঙ্কেত দেখছেন। তাঁদের মতে এতে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হবে। জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ এবং পরিবেশ পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবেই শ্যামাপোকার ধ্বংসের অন্যতম কারণ বলে মানছেন তাঁরা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি বিভাগের প্রাক্তন যুগ্ম সচিব (পতঙ্গ) সন্তোষ কুমার রায় বলেন, ‘সবুজ এই পোকাগুলির বেঁচে থাকার জন্য কৃষিজমি লাগে। কৃষিপ্রধান এলাকাগুলিতেই এগুলিকে দেখা দেয়।’ কৃষিকাজে নানা রোগের কারণ এই শ্যামাপোকা। ধানের পাতা, শিসের রস খেয়ে নেন। তাই ধানে কুটির সম্ভাবনা বাড়ে। তাই কৃষকরা একে শোষক পোকাও বলে থাকেন। সন্তোষবাবু আরও বলেন, বেশ কয়েক বছর লক্ষ্য করছি শ্যামাপোকার প্রাদুর্ভাব কমে গিয়েছে। তবে নির্দিষ্ট করে তিনি শ্যামাপোকা কমে যাওয়ার পরিমাণ জানাতে পারেননি।
তবে শ্যামাপোকার সঙ্গেই এই সময় ঢুকে পড়ে বাদামি শোষক পোকা। অনেকেই একে শ্যামাপোকার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। এগুলিকে শ্যামাপোকার মতোই দেখতে হলেও রং বাদামি। এগুলিও আলোর আকর্ষণে ছুটে আসে। তবে শ্যামাপোকার থেকেও কৃষকদের অনেক বেসি ক্ষতি করে থাকে এই বাদামি শোষক পোকা।
0 মন্তব্যসমূহ