ইতিহাস (History) বড় নির্মম। দিনটা ছিল ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন। মাত্র কয়েকঘণ্টার যুদ্ধে বাংলার তাজ ব্রিটিশের হাতে চলে যায়। স্থান পলাশির প্রান্তর (Palashi)। চলুন ঘুরে আসি (visit) সেই পলাশির প্রান্তরে। ইতিহাসের আঁচে একবার নিজেকে সেঁকে নিতে।
ঐতিহাসিক জায়গায় ভ্রমণের আগে একবার ইতিহাসের দিকে চোখ বোলানো যাক। নবাব আলিবর্দির দৌহিত্র সিরাজদ্দৌলা তখন বাংলার মসনদে। তাঁর সেনাপতি মীরজাফর। পলাশির আম্রকাননে অবস্থান করছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তারা সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছিল সিরাজদ্দৌলাকে। তাই কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো ছাড়া কোনও গতি ছিল না সিরাজের। মনে রাখতে হবে মসনদে বসেই কোম্পানির কর্তৃত্ব খতম করতে কলকাতা অভিযান করেছিলেন সিরাজ। ১৭৫৭ সালে সিরাজ বাহিনীর আক্রমণে হেরে গিয়ে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ ছেড়ে পালান তৎকালীন গভর্নর ড্রেক ও অনেক অসামরিক ব্যবসায়ী নাগরিক ও কিছু উচ্চপদস্থ সাহেব কর্মচারী। সেই দিক দিয়ে সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ছিল কোম্পানির সম্মান রক্ষার প্রশ্ন। সেই লড়াইটাই হয়েছিল পলাশিতে।
- নবাব সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে সৈন্যসংখ্যা ছিল ৫০ হাজার। এর মধ্যে পদাতিক ৩৫ হাজার, অশ্বারোহী ১৫ হাজার। মোট কামান ৫৩ টি। ফরাসি সেনাপতি মঁসিয়ে দ্য সিনফ্রের অধীনে ৪ টি কামান ও ৪৫ জন ফরাসী সৈন্য।
- অন্যদিকে, রবার্ট ক্লাইভের পক্ষে সৈন্য সংখ্যা ছিল ৩ হাজার। এর মধ্যে ভাড়াটে দেশীয় সিপাহি ২১০০, ইউরোপীয়ান- ৯৫০ জন, ১৫০ জন গোলন্দাজ। মোট কামান ৬ টি।
দুই পক্ষের এই বিপুল সেনাবহর দাঁড়িয়ে ছিল পলাশির প্রান্তরে। যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতক সেনাপতি মীরজাফর ও রায়দুর্লভের চক্রান্তে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী যুদ্ধ থেকে বিরত থাকে। মীরমদন ও মোহন লাল তাদের অধীন স্বল্পসংখ্যক সৈন্য নিয়ে প্রাণপণ যুদ্ধ করেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। পরাজিত হন সিরাজ।
কীভাবে পালাশি যাবেন? (How to reach Palashi?)
সবচেয়ে ভাল হয় ট্রেনে পলাশি পৌঁছানো। সেক্ষেত্রে কলকাতা-লালগোলা প্যাসেঞ্জার ধরুন। দেখুন ট্রেনের টাইম টেবিল সাড়ে নটা নাগাদ পলাশি পৌঁছে যায় এই ট্রেন। স্টেশনে নেমেই নজরে পড়বে একটি ফলক।
সেখানে বাঙালির ভাগ্যাকাশে কীভাবে দুর্দিন ঘনিয়ে এসেছিল, তা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। পড়তে পড়তে গা ছমছম করে উঠবে। এরপর স্টেশনের বাইরে এসে একটু জল খাবার খেয়ে নিন। আর সময় পাবেন না। কারণ আপনার গন্তব্য ইতিহাস। খাঁ খাঁ প্রান্তর।
অটো ধরে পৌঁছে যান পলাশিতে। একটি রাস্তা বেঁকে গিয়েছে ফেরিঘাটের দিকে। সেই বাঁকের মুখেই নেমে পড়তে হবে। সেখানেই নজরে পড়বে সিরাজদ্দৌলার মর্মর মূর্তি।
এরপর ভিতরে প্রবেশ করুন। প্রথমেই ধাাক্কা খাবেন। আম্রকানন বলা হলেও, এখন সেখানে আম গাছের চিহ্নমাত্র নেই। কিছুটা দূরে নজরে পড়বে তিনটি স্তম্ভ। এই স্থানেই পতন হয়েছিল মীরমদনের। এরপর রণাঙ্গন ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সিরাজ।
কোথায় থাকবেন? (Where to stay?)
পলাশিতে অনেক হোটেল রয়েছে। কয়েক ঘণ্টার জন্য সেগুলি ভাড়া নিতে পারেন। তবে থাকতে হলে যেতে হবে কিছুটা দুরে বেথুয়াডহরিতে।
0 মন্তব্যসমূহ