চারিদিকে শুধু বরফ। সিয়াচেন ঘাঁটিতে বসে দেশ রক্ষার গুরু দায়িত্ব রজত ভাটিয়ার কাঁধে। মনে পড়ল গ্রামের বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী-পুত্রের কথা। লিখে ফেললেন চিঠি। পিন কোড (pin code) দেওয়া নির্দিষ্ট ঠিকানা খুঁজে তা পৌঁছে গেল বাড়িতে। হিন্দি সিনেমার দৌলতে এ দৃশ্য বহু পরিচিত। জানেন কি বাড়ির ঠিকানার যে জন্য যে পিন কোড (pin code) ব্যবহার করা হয়, তার ইতিহাস (history)? মাত্র ৫০ বছর আগে ১৯৭২ আজকের দিনে (15th August) ভারতে চালু হয়েছিল পিন কোড। পঞ্চাশ বছর আগে এভাবেই ডাক ব্যবস্থায় বিপ্লব এসেছিল। আজ যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি পালন করছে গোটা দেশ, তখন জানা যাক পিন কোডের পঞ্চাশ বছরের জয়যাত্রা।
কেন চালু করা হল পিন? (Why was Pin introduced?)
ব্রিটিশ আমল থেকে ডাক হরকরা বা রানাররাই পিঠে করে চিঠি পৌঁছে দিতেন বাড়িতে বাড়িতে। কিন্তু সরকারি কাজে চিঠি চাপাটির গুরুত্ব দিনদিন বাড়তে থাকে। এই অবস্থায় ডাক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা শুরু হয়। ডাক বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, স্বাধীন হওয়ার সময় সারা দেশে ২৩ হাজার ৩৪৪টি ডাকঘর ছিল। এর বেশিরভাগটাই ছিল শহরাঞ্চলে। স্বাধীনতার পর দেশ দ্রুত এগতে থাকে। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ডাক ব্যবস্থাকে সাজানো জরুরি হয়ে পড়ে। তাছাড়া, ব্যবহারিক সমস্যাও ছিল। দেশের বহু এলাকার নাম একই। নানা ভাষাভাষীর দেশে এলাকার নামের উচ্চারণও বদলে যেত। অনেক সময় পুরো ঠিকানা পড়ার মত সময় থাকত না ডাককর্মীদের হাতে। এই সব ব্যবহারিক সমস্যার সমাধান করে দিল ছয় সংখ্যার পিন কোড।
পিন কোডের সংখ্যাগুলির অর্থ কি? (What does the digits of Pin code indicate?)
ডাকবিভাগের মোট ন’টি জোন রয়েছে। এর মধ্যে আটটি সাধারণ মানুষের জন্য। ডাকবিভাগের পরিভাষায় ফাংশনাল জোন। সেনাবাহিনীর জন্য রয়েছে বিশেষ কোড (APS)। এই এপিএস শুরু হয় ৯ সংখ্যা দিয়ে।
পিন কোডের প্রথম সংখ্যাটি জোনাল কোড। যেমন পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে পূর্ব জোনে। তাই এর জোনাল কোড ৭।
পশ্চিমবঙ্গের পাশপাশি ওড়িশা, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, সিকিম ও আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের জোনাল কোড ৭। দ্বিতীয় সংখ্যাটি সাব রিজিয়ন। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সাব রিজিয়ন নম্বর ০ থেকে ৪। তৃতীয় সংখ্যাটি চিঠি ডেলিভারির জন্য নিজেদের মত জেলা ভিত্তিক ভাগ করে নিয়েছে ডাক বিভাগ যার পোশাকি নাম সর্টিং ডিস্ট্রিক্ট। বাকি তিনটি সংখ্যা আরও ক্ষুদ্র এলাকা ও নির্দিষ্ট ডাকঘরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
কে এই পিনকোডের উদ্যোগ নিয়েছিলেন? (Who did take initiative?)
এর পিছনে রয়েছেন তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব শ্রীরাম ভিখাজি ভেলানকার। তাঁর আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত। সংস্কৃত ভাষায় সাহিত্য রচনার জন্য ১৯৯৬ সালে তাঁকে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের পিন কোড ব্যবস্থার কি হাল? (What is the postal code system followed world over?)
মনে রাখতে হবে দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ২৫ বছরের মধ্যে এই অত্যাধুনিক পিন কোড ব্যবস্থা চালু হয় দেশে। সেই দিক দিয়ে এই সাফল্য গৌরবজনক তো বটেই। বিশেষত বিশ্বের তখনও প্রথম সারির দেশগুলিতে পিন কোডের মতো ব্যবস্থা চালুর এক দশকও কাটেনি।
- মাত্র ন’বছর আগে ১৯৬৩ সালের ১ জুলাই আমেরিকায় জোন ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান (ZIP) ব্যবস্থা চালু হয়।
- ব্রিটেনে পিনকোডের সমতুল্য ব্যবস্থা চালু হয় ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি।
- জাপানে পোস্টাল কোড অ্যাড্রেস সিস্টেম চালু হয় ১৯৬৮ সালের জুলাই মাসে।
এখনও কি পিন কোড ব্যবস্থা আগের মতোই গুরুত্ব বহন করে? (Is pin code still relevant?)
ইন্টারনেট এসেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। তবে পিন এখনও মানুষের ঠিকানা হিসেবে রয়ে গিয়েছে। ই-কমার্স বা ফুড ডেলিভারি সংস্থায় অর্ডার দিতে গেলে, যেটি আপনার এলাকা শনাক্ত করবে তা পিনই।
0 মন্তব্যসমূহ