অবহেলায় পড়ে রয়েছে বাংলার প্রথম
সম্রাট শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ
Karnasubarna Is A Neglected Place
বাংলার প্রথম রাজা শশাঙ্কের (Shashanka) রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একবার সখেদে বলেছিলে, বাঙালির ইতাহাস নেই। কথাটা যে ভুল নয়, তা মালুম হবে কর্ণসুবর্ণে এসে। বাঙালির প্রথম রাজার রাজধানী এমন অবহেলায় ফেলে রাখা হবে কেন? একটি প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। নাম কা ওয়াস্তে একটি আর্কিও লজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (ASI) ফলকও চোখে পড়বে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। সেখানে নেই কোনও পাহারাদার। তাই একদা বাঙালির রাজধানীতে গোরু চড়ে। ভিতরে স্থানীয় মানুষের শাড়ি শুকনো হয়। তবু রাজধানী তো। এর গরিমা অমলিন হওয়ার নয়!
ইতিহাস বলে ৬০৬ থেকে ৬৩৭ সাধারণাব্দ (CE) পর্যন্ত শাসন করেছেন শশাঙ্ক (Shashanka)। মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণকে (Karnasubarna) কেন্দ্র করে উত্তর পশ্চিম কনৌজ-বারণসী হয়ে পূর্বে কামরূপ যাকে বর্তমানে অসম বলি — সেই বিরাট এলাকা ছিল শশাঙ্কের শাসনাধীন। মেদিনীপুর জেলায় প্রাপ্ত এগরা তাম্রশাসনের একটি পদে লেখা আছে, ‘পৃথিব্যাং পরমদৈবৎ-শ্রীপরমভট্টারক-হারাজাধিরাজ-পরমমাহেশ্বর শ্রীশশাঙ্কদেবো রাজ্যং প্রশাসতি স্ম।’ সপ্তম শতকে ভারতে আসেন চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েনসাং। তাঁর ভ্রমণ গ্রন্থ ‘জিই জি’তে কিলোনসুফলন নামে একটি ভূখণ্ডের বিবরণ পাওয়া যায়। যা থেকে আধুনিক পণ্ডিতরা অনুমান করেন এটা আসলে কর্ণসুবর্ণ। তিনি বলেন, তান-মো-লি-তি থেকে তিনি কিলোনসুফলনে পৌঁছেছিলেন। তান-মো-লি-তি বলতে তিনি যে তৎকালীন মেদিনিপুরের বন্দর শহর তাম্রলিপ্তকে বুঝিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহ হওয়া গিয়েছে। হিউয়েনসাং ভারতে ভ্রমণে এসে তৎকালীন একাধিক রাজ্যের আয়তনের বর্ণনা দিয়েছেন। যা থেকে জানা যায়, কর্ণসুবর্ণের আয়তন ছিল ৪,৪৫০ লি। আর তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল ৩১ হাজার ১৫০ লি এলাকা জুড়ে। অত্যন্ত জ্ঞানী মানুষ হওয়ায় তাঁকে ‘শ্রীপরমভট্টারক’ উপাধি দেওয়া হয়। তিনি শিবের ভক্ত ছিলেন।
কিভাবে যাবেন কর্ণসুবর্ণ? (How To Reach Karnasubarna?)
বহরমপুরগামী ট্রেনে গেলে কর্ণসুবর্ণ স্টেশন পড়ে। সবথেকে ভালো হয়, হাওড়া থেকে আজিমগঞ্জগামী ট্রেনে কর্ণসুবর্ণ যাওয়া যায়। কর্ণসুবর্ণে হাওড়া-আজিমগঞ্জ (Howrah-Azimgange Passenger Train) ট্রেন দাঁড়ায়। তবে সবসময় হাওড়া থেকে ট্রেন সরাসরি ট্রেন পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে কাটোয়া (Katwa)
গিয়ে সেখান থেকে আজিমগঞ্জ প্যাসেঞ্জার ধরাই ভালো। এরপর অটো বা টোটো নিয়ে পৌঁছে যান কর্ণসুবর্ণ। সামনেই যদুপুর বাসস্ট্যান্ড। স্থানীয়রা একে ‘শশাঙ্ক রাজার ঢিবি’, ‘কর্ণের প্রাসাদ’ ইত্যদি বলেন। পুরো এলাকাটি রাজবাড়িডাঙা নামে পরিচিত। সেই কবে কর্ণসুবর্ণ বা কানসোনা তার রাজধানীর তকমা হারিয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের কাছে রাজবাড়িডাঙা হয়ে বেঁচে আছে!
কি কি দেখবেন?
শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণর ধ্বংসাবশেষ। একটু দূরেই রয়েছে হিউয়েনসাং বর্ণিত লো-টো-বী-চী বা রক্তমৃত্তিকা বৌদ্ধ মহাবিহারের ধ্বংসাবশেষ। স্থানীয়রা যাকে রাক্ষসীডাঙা বলে থাকেন। আর একটু এগোলেই পাবেন গঙ্গা। চাইলে রামনগর ঘাটে স্নানও সারতে পারেন। নিরালা এই ঘাটে স্নান, শরীর ও মন জুড়িয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
কোথায় থাকবেন (Where to Stay)?
যদুপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে কিছু লজ রয়েছে। তবে ভালো মানের নয়। সবচেয়ে ভালো হয়, বহরমপুর শহরে থাকা। এখান থেকে মাত্র ছ’মাইল দূরে কর্ণসুবর্ণ। চাইলে গাড়ি নিয়েও বহরমপুর থেকে কর্ণসুবর্ণ যেতে পারেন।
0 মন্তব্যসমূহ